মহাকাশের গল্প সিরিজে আজ বলবো The Magellanic Clouds গ্যালাক্সির গল্প। আমরা যে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মধ্যে থাকি তার সবচেয়ে বড় ২টি স্যাটেলাইট গ্যালাক্সি কে বলা হয় ম্যাজেলানিক ক্লাউডস । এই দুই গ্যালাক্সি আমাদের কাছের প্রতিবেশীগুলোর মধ্যে অন্যতম।এগুলোর নাম “লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউড” (LMC) এবং “স্মল ম্যাজেলানিক ক্লাউড” (SMC)। তো এদের ঠিকানা কি ? এগুলো “ডরাডো” এবং “মেনসা” নক্ষত্রপুন্ঞ্জে অবস্থিত । এমনকি এদের খালি চোখেও দেখা যায় পৃথিবী থেকেই। তবে তার জন্য অবশ্য আপনাকে দক্ষিণ গোলার্ধে থাকতে হবে। শুধুমাত্র দক্ষিণগোলার্ধ থেকে এদের খালি চোখেই রাতের আকাশে দেখা যায়। আর বুঝতেই পারছেন বিখ্যাত পর্তুগিজ অভিযাত্রী ফার্ডিনান্ড ম্যাজেলানের স্মরণে এই স্যাটেলাইট গ্যালাক্সিগুলোর নামকরন ।
পৃথিবী থেকে আপনি যদি খালি চোখে দেখলে ক্লাউড দুটোর অবস্থান খুব কাছাকাছি মনে হবে।
কিন্তু সেটা শুধুমাত্র আমরা সেগুলোকে এতো দূর থেকে দেখছি বলে। আসলে এরা পরস্পর থেকে ৭৫ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউড পৃথিবী থেকে ১ লক্ষ ১৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।এটি প্রায় ১৪ হাজার আলোকবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত।অন্যদিকে স্মল ম্যাজেলানিক ক্লাউড পৃথিবী থেকে ২ লক্ষ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এবং এটি ৭ হাজার আলোকবর্ষ বিস্তৃত।জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের ধারণা আজ থেকে প্রায় ১৩ বিলিয়ন বছর আগে, ম্যাজেলানিক ক্লাউডগুলো আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি তৈরী হওয়ার সময়ই তৈরী হয়েছিল। জেনে রাখা ভালো ম্যাজেলানিক ক্লাউডগুলো আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিকে ১৫০০ মিলিয়ন বছরে একবার এবং ৯০০ মিলিয়ন বছরে একে অপরকে প্রদক্ষিণ করে।
এবার আসি এই গ্যালাক্সি দুটি কি দিয়ে তৈরী ?
আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে অন্যায় গ্যালাক্সির তুলনায় গ্যাসীয় পদার্থ বেশ কম। কিন্তু সেই তুলনায় ম্যাজেলানিক ক্লাউডে প্রচুর গ্যাসীয় পদার্থ থাকলেও হিলিয়ামের চেয়ে বেশি ভরের গ্যাসীয় পদার্থের উপস্থিতি একেবারেই কম।তাই এখানে তারা তৈরীও হচ্ছে অনেক কম সংখ্যায়।এর ফলে ম্যাজেলানিক ক্লাউডে তারার উপস্থিতির পরিমাণ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির তুলনায় অনেক কম।তবে ক্লাউডগুলোতে কিছু স্টার ক্লাস্টার রয়েছে। পাশাপাশি এতে কিছু খুব পুরোনো তারাও রয়েছে যেমন R136a1,যেটি সূর্যের চেয়ে ২৬৫ গুণ বড় যা আমাদের মহাবিশ্বের অন্যতম বড় একটি নক্ষত্র।
©smartbengali
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছেন লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউডে প্রায় ৩০ বিলিয়ন এবং স্মল ম্যাজেলানিক ক্লাউডে প্রায় ৩ বিলিয়ন তারার উপস্থিতি রয়েছে। আর সাধারণত গ্যালাক্সি বলতে আমরা spiral বা ইলিপ্টিকাল শেপের দেখে অভ্যস্থ হলেও এই ম্যাজেলানিক ক্লাউড কিন্তু একেবারেই আলাদা অনেকটা ছড়ানো ছিটানো দেখতে। এদের এমন আকৃতির মূল কারণ আমাদের মিল্কিওয়ের গ্রাভিটেশনাল এফেক্ট যা তাদেরকে এমন অনিয়মিত আকার দিয়েছে। এদের কে তাই irregular galaxies ও বলে।
ম্যাজেলানিক ক্লাউডগুলো বিজ্ঞানীদের খুব আগ্রহের বিষয় তার অন্য তম কারণ হলো এই গ্যালাক্সি ক্লাউড স্টাডি করে বিজ্ঞানীরা সক্রিয় নাক্ষত্রিক গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছেন । যেমন এতে অবস্থিত “ট্যারান্টুলা নেবুলা” হলো একটি বিশাল আয়নিত-হাইড্রোজেন অঞ্চল যেখানে অনেক অল্পবয়সী ও উষ্ণ তারা রয়েছে যা আমাদের গ্যালাক্সির প্রতিবেশীদের(Local group) মধ্যে সবচেয়ে বড় আয়নিত গ্যাসীয় অঞ্চল।অবশ্য শুধু ম্যাজেলানিক ক্লাউডই নয়, পাশাপাশি আরো ডজনখানেক বামন গ্যালাক্সি(Dwarf Galaxy) আমাদের গ্যালাক্সিকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে এবং আমাদের সঙ্গ দিচ্ছে। তবে তাদের গল্প অন্য আর এক দিনের জন্য তোলা থাক ।

সোর্স- https://astronomy.com/…/meet-the-magellanic-clouds-our…
#space #nasa #smartbengali #techbangla #বিজ্ঞান #মহাকাশেরগল্প #স্পেস #নাসা

Tagged in:

,