আজ থেকে ঠিক দশ বছর আগে ২০১২ সালের  ৪ জুলাই  প্রকাশ্যে এসেছিল হিগস বোসন অর্থাৎ, ঈশ্বরকণার অস্তিত্বের কথা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত সার্নের (CERN) লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে খোঁজ মিলেছিল এই কণাটির। গবেষণায় উঠে আসে, হিগস বোসন কণাই প্রকৃতিতে প্রাপ্ত অন্যান্য সমস্ত কণার ভরের কারণ। এবার তার এক দশক পর আরও এক ঐতিহাসিক পরীক্ষার সাক্ষী হতে চলেছে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে (Large Hadron Collider)। আর তা নিয়ে সরগরম বিজ্ঞানের জগৎ।

মাল্টিভার্স, ডার্ক ম্যাটার এই  শব্দবন্ধের সঙ্গে অল্পবিস্তর  আজকাল আমরা সকলেই পরিচিত।প্রায়ই সাম্প্রতিক নানা সাইন্স ফিক্শন সিনেমায় এই সব বিষয় উঠে এসেছে , সত্যি বলতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়া আর সাইন্স ফিক্শন  সিনেমার দৌলতেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এইসব কথা। parallel  universe  বা  সমান্তরাল বিশ্বের নানা তত্ত্বের উদ্ভব হলেও বিজ্ঞান কিন্তু  এখনো পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করতে পারেনি সমান্তরাল বিশ্বের অস্তিত্ব । তবে এবার সেই শূন্যস্থান পূরণ করে দিতে পারে ইউরোপিয়ান অর্গানাইজেশন ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চের গবেষণা।

আলোর তুলনামূলক বেগে গতিশীল বিপরীতমুখী ভারি কণার সংঘর্ষের ফলে তৈরি হয় অসংখ্য ছোটো মৌলিক কণা। এই মৌলিক কণাগুলির মধ্যেই আদতে লুকিয়ে রয়েছে পদার্থবিদ্যার রহস্য। এর আগে ২০১২ সালে বিপরীতমুখী প্রোটনের রশ্মির মধ্যে সংঘর্ষ ঘটিয়েই তৈরি করা হয়েছিল হিগস বোসন। তবে এবারের সংঘর্ষ ছাপিয়ে যেতে চলেছে পূর্ববর্তী সংঘর্ষের শক্তির মাত্রাকেও। প্রোটন বিমের বেধ আরও সংকীর্ণ করায়, এবার উৎপাদিত হবে প্রায় ১৩.৮ ট্রিলিয়ন ইলেকট্রন-ভোল্ট শক্তি। ফলে, হিগস বোসনের থেকেও অস্থায়ী কণাদের জন্ম হতে পারে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে, এমনটাই বিশ্বাস  বিজ্ঞানীদের ।

 

হিগস বোসন থেকেই ভর পেয়েছে ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কণা— তা জানা গিয়েছিল ২০১২ সালের পরীক্ষায়। কিন্তু সাথে সাথেই আরো গুরুত্বপূর্ণ প্ৰশ্ন উঠে আসে যে – কোথা থেকে ভর পেল হিগস বোসন? পাশাপাশি ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির সময় থেকেই সমানভাবে উপস্থিত ছিল ম্যাটার ও অ্যান্টিম্যাটার। আজ প্রকৃতিতে ম্যাটারের দেখা মিললেও, অ্যান্টি-ম্যাটার উধাও হয়ে গেল কোথায়? সার্নের এলএইচসিতে নতুন কণার সন্ধান পাওয়া গেলে উত্তর পাওয়া যাবে পদার্থবিদ্যার এই ‘অন্ধকার’ রহস্য ও তার সমাধানের। বদলে যেতে পারে মৌলিক কণাতত্ত্বের সনাতন মডেলও।

শুধু সুইজারল্যান্ডই নয়, সার্নের এই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ইউরোপের একাধিক দেশের বিজ্ঞানীরা। খুশির ককথা এই গৌরবের ভাগীদার ভারতও। এলএইচসি-র মূল পরিকাঠামো আপগ্রেড করা তো বটেই, পরীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের জন্যও সুপার-কম্পিউটিং পরিষেবা প্রদান করছে ভারত। তাছাড়া সার্নের অন্যতম দুটি বড়ো ডিটেক্টর— কমপ্যাক্ট মুন সোলেনয়েড এবং জেনারেল-পারপাস ডিটেক্টরের নেপথ্যেও রয়েছে ভারত। যা চিহ্নিত করতে পারে ডার্ক ম্যাটারকে। সব মিলিয়ে বহু প্রতীক্ষিত এই রহস্য অন্বেষণে ভারতের অবদানও কম নয়। ২০১৮ সালের পর মেরামতির জন্য ৩ বছর বন্ধ ছিল এলএইচসি। এবার বিজ্ঞানের জগতে তার প্রত্যাবর্তন নতুন কী কী রহস্য সামনে আনে— সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরাই শুধু নয় , সাধারণ কৌতুহলী মানুষও।

 

Tagged in:

,