আগের পর্বে আমরা ব্ল্যাকহোল জিনিসটা কি ? কিভাবে এ ব্ল্যাক হোলের জন্ম কিভাবে হয় এইসব নিয়ে ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা করার চেষ্টা করেছি। আজকে আমরা এই স্বল্প পরিচয় কে আরেকটু প্রগাঢ় করার চেষ্টা করব। তার আগে আর একবার সহজ ভাষায় আগের আলাপ টা নতুন করে ঝালিয়ে নেয়া যাক।

এককথায় ব্ল্যাকহোল মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান যেখান থেকে কোন কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত তার ভিতর থেকে বের হয়ে আসতে পারে না।ব্ল্যাকহোল তৈরী হয় খুব বেশি পরিমান ঘনত্ব বিশিষ্ট ভর থেকে। কোন অল্প স্থানে খুব বেশি পরিমাণ ভর একত্র হলে সেটা আর স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারে না। বোঝার সুবিধার জন্য আমরা এই মহাবিশ্বকে একটি বিশাল কাপড়ের টুকরো টানটান করে ধরা আছে এমন কল্পনা করতে পারি। এবার এই কাপড়টার উপর আমরা যদি কোন স্থানে খুব ভারি কিছু বস্তু ধরুন একটা পাথরের বল রাখি তাহলে কি দেখব ? যে স্থানে ওই বলটা আছে সেই স্থানে কাপড় কিছুটা স্বাভাবিকভাবেই বলের ভারে নিচু হয়ে যাবে। ঠিক এই ব্যাপারটাই ঘটে মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে। অল্প জায়গার মধ্যে যেখানে যেখানে খুব বেশি পরিমাণ ভর এক জায়গায় জড়ো হয়েছে সেই সব স্থানে গর্ত হয়ে গেছে আর এই গর্ত গুলোই হলো ব্ল্যাকহোল।

ছবি সৌজন্য- ESA

আর কিভাবে একটা তারা সুপারনোভা বিস্ফোরণের পর ধ্বংসাবশেষ হিসাবে পড়ে থাকা অংশে খুব অল্প জায়গায় ওই পুরো তারা টার ভর জমা হয় তা আগের পর্বেই বলেছি। এই অসামান্য ভর মহাকাশের ফ্যাব্রিকে স্পেস টাইম কার্ভ সৃষ্টি করে। ওই আমাদের কল্পনার বিশাল কাপড়ের টুকরোতে যেখানে বল টা রাখা হলো সেখানে ভারে যে কাপড় টা কিছু টা ঝুলে যায় ওটাকেই স্পেস টাইম কার্ভ বলে। এই ব্ল্যাকহোল নামটা দেন জন আর্চিবল্ড হুইলার নামে এক প্রখ্যাত মার্কিন থিওরিটিক্যাল ফিজিসিস্ট । তাঁর নাম খুব বেশি লোক না জানলেও তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন পদার্থবিজ্ঞানী। ওঁকে নিয়ে পরে একদিন আলোচনা করবো।

সবার আগে আমাদের জানতে হবে ব্ল্যাক হোল দেখতে কেমন ? কারণ দেখতেই যদি কেমন না জানি তাহলে তো পরিচয় খুব বেশি দূর এগোবেনা।
সেটা জানতে গেলে আমাদের ৩টি জিনিস জানতে হবে (আরো অনেক কিছুই আছে কিন্ত একটা প্রাথমিক স্কেচ করতে এই ৩টি জিনিসই যথেষ্ট )

১)সিঙ্গুলারিটি ২) ইভেন্ট হরাইজন ৩) আক্রিশন ডিস্ক

সিঙ্গুলারিটি 

ব্ল্যাকহোল শুনলেই আপাত ভাবে সবার আগে মাথায় আসে কালো অন্ধকার একটা গর্ত বা শূন্যস্থান। বা আমরা সাধারণত ব্ল্যাকহোলকে দানবীয় একটি গোলক ভাবি। আবার ইন্টারনেট এবং বিভিন্ন বইতে যে ছবিটা দেখে আমার অভস্ত্য ওটা দেখে ভাবি যে এটি ফানেল আকৃতির।। কিন্তু বাস্তবে ব্ল্যাকহোল আসলে অসীম ঘনত্বের একটি কালো বিন্দু যার সমস্ত ভর ওই বিন্দুতেই পূঞ্জীভূত। এই বিন্দুকে বলে সিঙ্গুলারিটি। গণিতে যেমন বিন্দুর অবস্থান ছাড়া আর কোন প্রপার্টি নেই কিন্তু এই সিঙ্গুলারিটির সব থেকে বড়ো পরিচয় হলো তার এই সীমাহীন বা কল্পনাতীত ঘনত্ব (Density ) .
আর এই অসীম ঘনত্বের জন্য স্পেস টাইম কার্ভের যে কার্ভেচার বা বক্রতাও  সেটাও অসীম হয়। এখানে আমাদের বইতে পড়া সাধারণ পদার্থবিদ্যার কোন নিয়ম খাটে না। একে বলে Gravitational singularity বাংলায় অদ্বৈত বিন্দু। এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে কেন সাধারণ পদার্থবিদ্যার নিয়ম খাটবেনা বাপু ? এতো যে ফিজিক্স পড়লাম স্কুল কলেজে সবই কি বৃথা ? তা ঠিক নয় ! কেন নিয়ম খাটে না তা বুঝতে হলে প্লাংকের একক সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে।

আমরা এখন জানি সিঙ্গুল্যারিটি হল খুব ক্ষুদ্র একটা জিনিস যা শূন্য মাত্রার ! প্রশ্ন আসতেই পারে শূন্যের সঠিক মান না জানা গেলেও শূন্যের একদম কাছাকাছি মান যেমন পাওয়া সম্ভব , তেমনি সিঙ্গুল্যারিটি ব্যাখ্যা না করা গেলেও এমন দৈর্ঘ্যের বস্তু থাকতেই পারে যাকে পরিমাপ করা সম্ভব । যে ম্যাচে chase করতে আরো ২০০ রান বাকি হাতে দুই উইকেট সেই ম্যাচে কি বাকি দুজন ব্যাট করতে  নামবে না ? যতটা কাছাকাছি রান করা যায় টার্গেটের সেই চেষ্টাতো করতে হবে !! তো বিজ্ঞানীরাও তাই সিঙ্গুলারিটিকে মাপতে না পেরে হাল ছেড়ে দেন নি।  হ্যা ,এমন সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বস্তুর উপস্থিতি পদার্থবিজ্ঞানের নীতি দ্বারা সম্ভব যাকে  পরিমাপ করা যায় । আর পরিমাপযোগ্য এই সর্বনিম্ন দৈর্ঘ্যকেই প্ল্যাংকের দৈর্ঘ্য বলে।
প্ল্যাংকের দৈর্ঘ্য হল এমন ক্ষুদ্রতম দৈর্ঘ্য যার নিচে ঘটা কোনো ঘটনা কে ব্যাখ্যা করার মতো কোনো বিজ্ঞান আজপর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নি। সংখাগত ভাবে এই মান হল 1.6 x 10^-35 মিটার !! ভাবছেন এটা তো শুনতে বেশ বড়ই লাগছে। একটু দাঁড়িয়ে যান। একটা প্রোটনের সাইজ এই প্লাঙ্ক দৈর্ঘ্যর ১০০ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন গুন্ বেশি। সেটি আবার একটা হাইড্রোজেন পরমানুর ব্যাসার্ধের চাইতে ৬০,০০০ গুন ছোট । হাইড্রোজেন পরমাণু আবার ডিএনএর ডবল হেলিক্সের চাইতে ৪০ গুন ছোট । যা আবার একটি বালির দানার চাইতে কয়েক মিলিয়ন গুন ছোট ! তাহলে বুঝতে পারছেন এই প্ল্যাংকের দৈর্ঘ্য কত ছোট একটা জিনিস। আর ব্ল্যাকহোল সিঙ্গুলারিটি এই প্লাঙ্ক লেংথ দিয়েও ব্যাখ্যা করা যায় না সঠিক ভাবে। এমনই তার সাইজ।
এই এতো তাত্ত্বিক কচকচির একটাই কারণ আসলে singularity জিনিসটা যে কত ছোট তার একটা ধারণা দেওয়ার নিষ্ফল চেষ্টা। এই যখনই ব্ল্যাকহোলে সিঙ্গুলারিটি নিয়ে কথা উঠবে আমার মনে হয় একটা লাইনই যথেষ্ট – “we don’t know what happens here”.  একইভাবে প্লাংকের দৈর্ঘ্যের মতই সময়ের ব্যাপারেও সর্বনিম্ন বলে একটা টার্ম আছে ওর থেকে ছোট পরিমাণ সময়কে আর পরিমাপ করা যায় না। সময়ের এই সর্ব ক্ষুদ্রতম পরিমাণকে প্লাংকের সময় বলে ! পদার্থবিজ্ঞানে, প্লাংকের সময় হল প্লাংক একক ব্যবস্থায় শূণ্য মাধ্যমে আলো এক প্ল্যাংকের দৈর্ঘ্য আতিক্রম করতে যে সময় লাগে। একে tP দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কেন আবার সময় নিয়ে টানাটানি করতে চাইছি সেই বিষয়ে যথাসময়ে বলবো !

ইভেন্ট হরাইজন 

Singularity জানার পর আমাদের এরপর যেটা সব থেকে বেশি জানার দরকার সেটা হলো event horizon ,
ধরুন আপনি একটা ব্ল্যাকহোলের দিকে যাচ্ছেন ,আস্তে আস্তে ব্ল্যাকহোলের কাছে আসছেন , যেতে যেতে ঠিক একটা সীমা থাকে যেটা অতিক্রম করলে আর ফিরে আসা  যায়না। এই সীমাকে বলা হয় ঘটনা দিগন্ত(Event horizon) । একে খুব কাব্যি করে বলা হয় the point of no return বা প্রত্যাবর্তনের শেষ বিন্দু । এরপর কি হয় আমরা জানি না। এমনকি আলোও এই সীমা অতিক্রম করলে আর ফিরে আসতে পারেনা ! আর যেহেতু ব্ল্যাকহোলের ভর সসীম তাই ব্ল্যাকহোলের ভরের উপর এর ঘটনা দিগন্তের আকৃতি নির্ভর করে । অর্থাৎ সব ব্ল্যাকহোলের ইভেন্ট হরাইজন এক সাইজের হয় না।

ঘটনা দিগন্ত বা Event horizon হল একমুখী রাস্তা।এই সীমা অতিক্রম করলে আর ফিরে আসা সম্ভব নয়। কেন এই নাম -ঘটনা দিগন্ত ?
সাধারন আপেক্ষিকতা মতে, ঘটনা দিগন্ত হচ্ছে কোন একটি ঘটনার স্থান-কাল(স্পেস-টাইম) এর সীমানা যার বাইরে অবস্থিত কোন পর্যবেক্ষকের উপর এর কোন প্রভাব পড়ে না। সাধারন কথায় একে বলা যায় “প্রত্যাবর্তনের শেষ বিন্দু” যেখানে মধ্যাকর্ষন টান এতই শক্তিশালী হয় যে, কোন কিছুর পক্ষে পিছনে ফিরে যাওয়া আর সম্ভব হয় না। বিশ্বের সব থেকে দ্রুতগামী জিনিস আলোও (যদিও কোয়ান্টাম entanglement কে বাদ দিচ্ছি আপাতত ) ঘটনা দিগন্তের ভেতর গিয়ে আর ফিরে আসতে পারেনা। আসার চেষ্টা করলেও ওই ওই যে প্রবল মহাকর্ষের টান সেই টান এড়িয়ে নিক্ষিপ্ত আলো এর বাইরের পর্যবেক্ষকের কাছে পৌঁছুতে পারে না। আমরা যে ব্ল্যাকহোলের ছবি দেখি চারিদিকে আমরা আসলে ওই event হরাইজন কেই দেখি কারণ তারপর আর দেখতে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ আগে আলোচনা করা সিঙ্গুলারিটিকে দেখা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়।
আরো যদি ভালো ভাবে বুঝতে হয় তাহলে একটু অন্য ভাবে ভাবতে হবে এবং গণিতের সাহায্য নিতে হবে। যেটা সচেতন ভাবেই এখনো পর্যন্ত এড়িয়ে চলেছি। আরো ডিটেইলে হয় তো ভবিষতে এই নিয়ে লিখবো।  আপাতত একটা ছোট্ট সমীকরণ জানা যাক।
M ভরের কোনো বস্তু তখনই ব্লাকহোল হিসেবে কাজ করবে যখন এর ব্যাসার্ধ , একটি নির্দিষ্ট সংকট ব্যাসার্ধের সমান বা কম হবে । এই সংকট ব্যাসার্ধ বের করার জন্যে ১৯২৬ সালে কার্ল শোয়ার্জশিল্ড মুক্তিবেগ বের করার সমীকরনে আলোর জন্য মুক্তিবেগ(Escape velocity) হিসাব এর সাহায্য নেন ।

R=(2GM)/c^2 ;
এখানে , G=মহাকর্ষীয় ধ্রুবক ,
M=বস্তুটির ভর ,
c= আলোর দ্রুতি ,
R=সংকট ব্যাসার্ধ ।
সংকট ব্যাসার্ধ R কে শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধ বলা হয় ।

ছবি সৌজন্য – উইকিপিডিয়া

তাত্ত্বিকভাবে , যেকোন পরিমানের বস্তু যদি এর সংকট ব্যাসার্ধের মধ্যে সংকুচিত হয়ে অবস্থান করতে পারে , তবে তা ব্লাক হোলে পরিনত হবে । একটা ধারণা দেওয়ার জন্য বলা যায় সূর্যের ভরের হিসাব অনুযায়ী , এর সংকট ব্যাসার্ধ প্রায় তিন কিলোমিটার এবং পৃথিবীর জন্যে প্রায় নয় মিলিমিটার ! কোনো ব্লাকহোলের এই সংকট ব্যাসার্ধের মধ্যে কোন বস্তু ঢুকে পড়লে তা ব্লাকহোলের মহাকর্ষ আকর্ষন দ্বারা আটকা পড়ে যাবে এবং ব্লাকহোল থেকে মুক্ত হতে পারবে না । ব্লাকহোলকে ঘিরে যে সংকট ব্যাসার্ধ যেটা, সেটা দিয়ে আমরা যদি একটা গোলক (3D Sphere) কল্পনা করি তাহলে সেই গোলকের যে পৃষ্ঠ বা surface হবে সেটাকে কে বলা হয়  event horizon

আক্রিশন ডিস্ক

ব্ল্যাকহোলের ঘটনা দিগন্তের সীমানায় গ্যাস ও ধুলিকনার একধরনের মেঘের উপস্থিতি থাকে যাকে আক্রিশন ডিস্ক(accretion disk) বলে ।ব্ল্যাকহোলটিকে কেন্দ্র করে আয়নিত গ্যাস ও ধুলিকনা চক্কর দিতে থাকা এই আক্রিশন ডিস্ক (যার খুব বিচ্ছিরি বাংলা নাম উপলেপ চাকতি )থেকে যখন পদার্থ ব্ল্যাকহোলের অভ্যন্তরে পতিত হতে থাকে তখন ব্ল্যাকহোলের অভ্যন্তরের অতীব ঘন পদার্থের সাথে এদের বিশাল সংঘর্ষ হয়। সে একদম বাহুবলীর মারামারি দৃশ্যের থেকেও বেশি সংঘর্ষ । আর পদার্থের মারামারিতে যা হয় ! না না হাত পা ভাঙ্গে না  !  সংঘর্ষে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় এবং কিছু শক্তি তড়িৎচৌম্বকীয় আকারে নির্গত হয় । আর এই তড়িৎচৌম্বকীয় বিকিরনেই আক্রিশন ডিস্কের গ্যাস ও ধুলিকনারা জ্বলে উঠে !
এইবার আপনি আমাকে চেপে ধরবেন ! হচ্ছেটা কি ! একটু আগেই বলেছি ব্ল্যাকহোল থেকে কিছুই আর মুক্তি পেতে পারেনা। আবার বলছি তাপ ,ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক এনার্জি নির্গত হয়। শান্ত হন শান্ত হন ! আবার একবার ভালো করে পড়ুন উপরে কি লিখেছি।  লিখেছি আক্রিশন ডিস্ক থাকে ঘটনা দিগন্তের সীমায়। তাই তখনও মুক্তি পাওয়ার চান্স থাকে ! কিন্তু একবার ওই ইভেন্ট হরাইজন পেরিয়ে গেলেই কেস ! ওর আর পর নাই ! তবে একটা জিনিস বলে রাখি স্টিফেন হকিংকে তো চেনেন মানে চিনতেই হবে চিনতে চান না বা না চান ওনার ছবি আপনি দেখবেনই। দেখবেন নাই বা কেন আমাদের সময়ের শ্রেষ্ঠ theoretical physicist  বলে কথা ! যদিও দ্বিমত আছে বাপু । তো যাই হোক স্টিফেন হকিং ভদ্রলোক আবার ডেঞ্জারাস ! তিনি প্রমান করেছেন যে ব্ল্যাকহোল থেকেও  আবার একধরনের বিকিরন হয় যাকে আবার হকিং বিকিরন বলে। (নিজের নামে একটা radiation এর নামকরন  কজনের ভাগ্যে হয়  !)
এই হকিং বিকিরন নিয়ে পুরো একটা আর্টিকেল কখনো লিখবো।

 

View this post on Instagram

 

A post shared by Smart Bengali (@smartbengali)

আজ একটুকু থাকে ,ব্ল্যাকহোল কেমন দেখতে কিছুটা সেই ছবি হয় তো আঁকা গেলো। পরের পর্বে হঠাৎ  যদি আপনি ব্ল্যাকহোলে পড়ে যান ,বা হঠাৎ  বিবাগী হয়ে একদিন সকালে ব্ল্যাকহোলের দিকে যাত্রা শুরু করেন তাহলে কি কি হবে আপনার সাথে সেই নিয়ে আলোচনা করবো !

Tagged in:

, ,