এই সেই ঐতিহাসিক ছবি , যে ছবির জন্য আমরা এতো বছর অপেক্ষা করছিলাম। হাবল টেলিস্কোপের উত্তরসূরি নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ দিয়ে তোলা এটিই বিশ্ব ব্রম্ভাণ্ডের সব থেকে গভীর এবং শার্পেস্ট ছবি।
আপাতঃ দৃষ্টিতে সাধারণ মনে হলেও এ ছবির বিশেষত্ব কিন্তু অন্য জায়গায় ! আপনি আসলে তাকিয়ে আছেন প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগের সুদূর এক মহাবিশ্বের অবিশ্বাস্য এবং অপরূপ দৃশ্যের দিকে, সাথে কল্পনার থেকেও দূরে থাকা ছায়াপথগুচ্ছ। শুধু তাই নয় , এটি জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের প্রথম ফুল-কালার ডিপ ফিল্ড ইমেজ, এবং সেই সাথে মানবজাতির ইতিহাসে দূর মহাবিশ্বের ডিপেস্ট ও শার্পেস্ট ইনফ্রারেড ইমেজ।
সব থেকে অবাক করা ব্যাপার এই পুরো ছবিটি আসলে মহাবিশ্বের বিশালত্বের তুলনায় একটি ধুলিকণার সমানও নয়। আপনি যদি মাত্র একটি কণা বালি মাটি তে দাঁড়িয়ে নিজের একহাত দূরে রাখেন তাতে যেটুকু ফিল্ড অফ ভিউ হয় মাত্র সেই টুকু একটা অংশ এটা মহাকাশের।
এতো গেলো মহাবিশ্বের বিশালতার কথা। এবার এই ছবিটির দিকে একটু ভালো করে তাকানো যাক ! ছবিতে বেশি উজ্জ্বল আর বড় হাতেগোণা স্পাইক যে কয়টা দেখতে পাচ্ছেন , ওগুলো আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিরই (আমরা যে গ্যালাক্সির বাসিন্দা ) প্রতিবেশী তারকা। বাদবাকি যত আলোকবিন্দু দেখতে পাচ্ছেন,সেগুলো কোনো তারা নয় কিন্তু সবই একেকটি ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি !
এবার বলি আগেই বলেছি, এটি মানবজাতির ইতিহাসে দূর মহাবিশ্বের ডিপেস্ট ও শার্পেস্ট ইনফ্রারেড ইমেজ ।তো এখানে ডিপেস্ট’ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? ‘ডিপ ফিল্ড ইমেজ’ হলো যখন একটা অ্যাস্ট্রোনমিকাল ছবি তুলতে আকাশের নির্দিষ্ট একটি অংশে অনেক লম্বা সময় ধরে এক্সপোজার ধরে রাখা হয়। এই ছবির বেলা কত সময় রাখা হয়েছিল জানেন ? প্রায় সাড়ে বারো ঘণ্টা ! হাবল টেলিস্কোপ যেসব জ্যোতিষ্ক ‘চোখে’-ই দেখতে পেত না, সেটাও বলা যায় অনায়াসে দেখতে পাচ্ছে জেমস ওয়েবের নিয়ার-ইনফ্রারেড ক্যামেরা। ছবিতে এটা যে জায়গাটির অংশ দেখানো হয়েছে সেটা হলো Galaxy Cluster SMACS 0723।
আমরা যখন এধরণের কোনো অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ছবি দেখি আসলে আমরা অতীত কে দেখতে পাই। বুঝতে পারলেন না ? ব্যাপারটা একটু সহজ ভাবে বলা যাক। আপনি যখন সূর্যের দিকে তাকান তখন আসলে আপনি ৮ মিনিট ৩০সেকেন্ড আগের সূর্য দেখেন।অর্থাৎ আপনি আসলে ৮ মিনিট ৩০সেকেন্ড আগের অতীত একটি ছবি দেখতে পাচ্ছেন। মানে এই মুহূর্তে হঠাৎ করে যদি সূর্য গায়েব হয়ে যায় (কাল্পনিক পরিস্থিতি ,সূর্য গায়েব হবার সম্ভবনা নেই ,হয়তো সুপারনোভা হতে পারে ,কিন্তু সে অনেক দেরি আছে আশা করা যায় ) তাহলে কিন্তু আপনি সেটা ৮ মিনিট ৩০ সেকেন্ড বাদে জানতে পারবেন। আমরা আসলে কখনো বর্তমান সূর্য দেখতে পাই না । কারণ সূর্য থেকে আলো এসে পৃথিবীতে পোঁছাতে ৮ মিনিট ৩০সেকেন্ড লাগে । খুব সহজ করে বললে, এই ছায়াপথগুচ্ছ থেকে আলো এসে পৌঁছাতে ৪.৬ বিলিয়ন বছর মানে ৪৬০ কোটি বছর লেগেছে। (৪৬ এর পর কত গুলো শূন্য সে সব আপনারা হিসাব করুন !) শুধু তাই নয় পিছনের অগণিত দূর বিন্দু মতো যে ক্ষুদ্র বিন্দু গুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো কোনো না কোনোটা ১৩.৫ বিলিয়ন বা ১৩৫০ কোটি বছর আগের, যা কিনা আমাদের কাছে পৌঁছানো সবচেয়ে পুরাতন আলো। ( প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো মহাবিশ্বের জন্মলগ্ন আনুমানিক ১৩.৮ বিলিয়নবা ১৩৮০ কোটি বছর) অবিশ্বাস্য ভাবে এতো দূরের (বলা চলে পুরোনো)ছবিও এতো ভালো কোয়ালিটিতে জেমস ওয়েব তুলতে পেরেছে।
আরো লক্ষ্য করুন, অনেকগুলো গ্যালাক্সির ছবি কিছুটা বেঁকে আছে, বা কার্ভড হয়ে আছে। এটা হলো স্থান-কাল বক্রতা! জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি অনুযায়ী, ছবির কেন্দ্রে থাকা ছায়াপথগুচ্ছের গ্র‍্যাভিটির কারণে স্পেস-টাইম কার্ভেচার (স্থান-কাল বক্রতা বা space-time curvature ) দেখা যাচ্ছে। এই মজার ব্যাপার টা নিয়ে পরে কখনো লিখবো।
কিন্তু এই সব কিছুর উপর সব থেকে মজার ব্যাপার যেটা , এই গ্যালাক্সি গুলোর সম্মিলিত ভর এত অকল্পনীয় রকমের বেশি যে, সেটি মহাকর্ষিক লেন্স হিসেবে কাজ করছে, আর সেই লেন্স দিয়ে আমরা পেছনের আরও দূরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলোকবিন্দু ম্যাগনিফাইড হয়ে উঠতে দেখছি। সেগুলোও একেকটি অদেখা গ্যালাক্সি ! তার মধ্যেও রয়েছে অগণিত গ্রহ উপগ্রহ নক্ষত্র এবং অবশ্যই ব্ল্যাকহোল ।
দেখলেন তো ছবিটাকে যতটা সাধারণ ভেবেছিলেন ততটা কিন্তু মোটেও নয়।
©smartbengali

এমন আরো অনেক অজানা তথ্য জানতে গেলে আমাদের ইনস্টাগ্রামে ফলো করুন @smartbengali
আমাদের ফেইসবুক পেজ – https://www.facebook.com/SmartBengaliOfficial
Credits: NASA, ESA, CSA & STScI
#নাসা #মহাবিশ্ব #মহাকাশ #বিজ্ঞান #স্মার্টবেঙ্গলি #astrophotography #jameswebb #jameswebbspacetelescope
#smartbengali #বাংলায়বিজ্ঞান

Tagged in:

,