বিশ্বব্রহ্মাণ্ডর সব থেকে বিস্ময়কর বস্তু সম্ভবত ব্ল্যাকহোল। ব্ল্যাকহোল নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতুহলের অন্ত নেই। মহাজাগতিক এই বিস্ময় ,ব্ল্যাকহোল তার প্রবল মহাকর্ষীয় বল দিয়ে নিমেষে গিলে নিতে পারে আস্ত নক্ষত্রকে। শুধু একটি নয় ,ব্ল্যাকহোলের সামনে যা আসে তাকেই সে গ্রাস করে নয়। এমনকি আলোকরশ্মিও সেই ক্ষেত্র ছেড়ে বেরতে পারে না। অন্তত তাই এতো দিন মানুষের ধারণা ছিল ! এই ‘শোষক’ চরিত্র থাকার পাশাপাশি ব্ল্যাকহোল থেকে নির্গত হয় বিভিন্ন বিকিরণ। আইনস্টাইন তো বটেই পরবর্তী একাধিক বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানী নানা তত্ত্ব এবং গণিতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এই ধারণা। কিন্তু এতো দিন তার কোনো প্রমান ছিল না ? এবার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ল সেই ঘটনা। ব্ল্যাকহোলের পিছন থেকেও বেরিয়ে আসছে আলোকরশ্মি! যা হাতেনাতে আবারো প্রমাণ করে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ ত্বত্ত ।
পৃথিবী থেকে প্রায় ৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত আই জুইকি-১ ছায়াপথে অবস্থিত এই ব্ল্যাকহোলটির দিকে বহুদিন ই বিজ্ঞানীরা নজর রাখছিলেন । এটির আয়তন সূর্যের থেকেও প্রায় ১০ কোটি গুণ বড়ো। প্রকাণ্ড এই ব্ল্যাকহোলের চরিত্র পর্যবেক্ষণের সময় এক্স-রে’র বিচ্ছুরণ চোখে পড়ে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড্যান উইলকিন্সের চোখে। বিষয়টি নজরে আসার পর ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ‘সম্মি newton ’ এবং নাসার ‘Newstar ’ টেলিস্কোপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় বিস্তারিত তথ্য। আর তাতেই স্পষ্ট হয়ে যায় ব্ল্যাকহোলের পিছন থেকে আলোক বিকিরণের তত্ত্ব।
কিন্তু ব্ল্যাকহোল থেকে কীভাবে নির্গত হচ্ছে এই আলো? ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষের টানে তো কিছুই বাইরে আসতে পারে না। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ব্ল্যাকহোলের আকর্ষণের কারণে স্থানের বিকৃতি ঘটে। ফলে আলোকরেখা সরল পথে এগতে পারে না। বরং, তা আবদ্ধ হয়ে থাকে ব্ল্যাকহোলের মধ্যেই। ফলে সেই আলো আমাদের চোখে এসে পৌঁছায় না। এক্ষেত্রেও ঘটেছিল সেই ঘটনাই। অন্যদিকে ব্ল্যাকহোলের চারিদিকে আয়নিত গ্যাস এবং ধূলিকণার একটি ঘূর্ণায়মান ডিস্ক তৈরি হয়। আই জুইকি-১-এর ক্ষেত্রে ব্ল্যাকহোল থেকে নির্গত এক্স-রে পথ পরিবর্তন করে প্রতিফলিত হয়েছিল সেই ডিস্কে। আর সেই প্রতিফলিত আলোর বিচ্ছুরণই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।
ব্ল্যাকহোলের চারপাশে এই ঘূর্ণায়মান ডিস্কের উষ্ণতা থাকে প্রায় কয়েক লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গ্যাসের কণাগুলি থেকে ইলেকট্রন পৃথক করে তৈরি করে প্লাজমা। উইলকিন্স আরো জানিয়েছেন , এই পৃথকীকৃত ইলেকট্রনগুলিই চুম্বকীয় ক্ষেত্রের সংস্পর্শে এক্স-রে’র জন্ম দেয়। সম্প্রতি এই অভিনব আবিষ্কার থেকে আইনস্টাইন যে সঠিক ছিলেন তার প্রমাণ তো মিললই, পাশাপাশি এই এক্স-রে বিচ্ছুরণের মাধ্যমে ব্ল্যাকহোলের আভ্যন্তরীণ গঠনের বিস্তারিত তথ্যও আগামী দিনে সামনে আসবে বলেই আশাবাদী বিজ্ঞানীরা …
image credit -Mark Garlick/Science Photo Library